স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ নেওয়াজ মোর্শেদ নোমান, জয়পুরহাট ১৮.০৪.২৪ ইং জয়পুরহাটে স্ত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় স্বামী বিজিবি সদস্য ফিরোজ হোসেনের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
১৮ এপ্রিল কারাগারে থাকা বিজিবি সদস্যে ফিরোজ হোসেনের জয়পুরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সদর) হাজিরার দিন ধার্য্য ছিল। আজ মঙ্গলবার ফিরোজের নিযুক্ত আইনজীবিরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালতের বিচারক ফাতিমা খাতুন তার জামিন না মঞ্জুর করেছেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা গ্রামের সুজাউলের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া সুরভীর সঙ্গে বিজিবি সদস্য ফিরোজ হোসেনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ছুটিতে এসে যৌতুকের দাবিতে ফিরোজ তার স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে চাপ দিতেন। সুরভী যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় ফিরোজ।
ওই সময় বিজিবি সদস্য ফিরোজ তৎকালীন চুয়াডাঙ্গায় ৬ ব্যাটালিয়নে কর্মরত থাকা অবস্থায় অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুরভীর সঙ্গে সংসার করবে না বলে জানায়। এরপর বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে মোবাইলে ও এসএমএসে ওই মেয়েকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করে ফিরোজ।
মামলার বিবরণে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর সুরভী মানসিকচাপ সইতে না পেরে বাবার বাড়িতে ঘরের তীরের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে সেই ছবি তুলে ফিরোজকে দেয়। বিজিবি সদস্য ফিরোজ সেই ছবি দেখে বলেন, ‘তোর মতো মেয়ের দরকার নাই আগে মরে যা, আমি সরকারি চাকরি করি আমার কিছুই হবে না।’ একথা শোনার পর মেয়েটি আবেগে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দেয়। ফিরোজ তার স্ত্রীর পরিবারকে মোবাইল ফোনে জানায়, তার স্ত্রী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মোবাইলে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা জানালা দিয়ে দেখতে পায় সুরভি গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। তারা ঘরের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ২৪ অক্টোবর ২০২০ সালে জয়পুরহাট সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়।
এরপর সুরভির বাবা সুজাউল ইসলাম বাদী হয়ে ফিরোজ হোসেন ও তার মা কারিমা আক্তার ফেন্সি (৪৮) দুজনের নাম উল্লেখ করে ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর জয়পুরহাট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলাটি তদন্ত করেন সিআইডি পুলিশ। জয়পুরহাট সিআইডি পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান সুইট মামলাটি তদন্ত করে ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারী আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
জয়পুরহাট সিআইডি পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান সুইট তদস্ত রিপোর্টে বলেন, সিপাহী ফিরোজ হোসেন (২৫), ব্যাচ নং- ৯২, আইডি নং- ১০৪২৩৯, পিতা- মো: ইদ্রিস আলী, মাতা- মোছা: কারিমা আক্তার ফেন্সি, সাবেক কর্মস্থল: ৬ নং ব্যাটালিয়ান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), চুয়াডাঙ্গা।
মামলাটির ভিকটিম জান্নাতুল মাওয়া সুরভী (২২) তাহার স্বামী বিজিবি সদস্য মোঃ ফিরোজ হোসেন এর প্ররোচনায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তদন্তকালে জানা যায় বিজিবি সদস্য ফিরোজ হোসেন ক্যাম্পে থাকাকালীন সময় তার স্ত্রী সুরভির হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার ও টেক্সট মেসেজ এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় অশ্লীল কথাবার্তা, কটুক্তি, গালিগালাজ সহ সুরভীর চারিত্রিক বিষয় নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করায় ভিকটিম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ভিকটিম ও তার স্বামীর মধ্যকার চ্যাটিং সংক্রান্ত মেসেজগুলির সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য আমি ভিকটীমের মোবাইল ফোনের forensic expert opinion এর জন্য মোবাইল ফোনটি জব্দপূর্বক সিআইডি সদর দপ্তর, মালিবাগ, ঢাকায় প্রেরণ করি। এছাড়াও মামলাটিতে বিভিন্ন প্রকার তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর তদন্ত করি। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মতামত অনুসারে, আসামি ফিরোজ হোসেন তার স্ত্রী সুরভীকে বিভিন্ন সময় ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেক্সট মেসেজ এর মাধ্যমে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ গালিগালাজ করে ভিকটিমকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে প্ররোচিত করেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
ওই মামলায় আসামি এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে ২৮ দিনের জমিনের আদেশে নিম্ন আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন। এরপর গেণ মার্চ বিকেলে জয়পুরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সদর) হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক আতিকুর রহমান তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আজ ১৮ এপ্রিল পুনরায় জামিন আবেদন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতিমা খাতুন জামিন না মঞ্জুর করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী রায়হান নবী বলেন, আসামি ফিরোজ হোসেন উচ্চ আদালত থেকে ২৮ দিনের জামিনের অর্ডারে নিম্ন আদালতে হাজিরের আদেশ ছিল। নির্ধারিত সময়ের আগেই ৫ মার্চ রোববার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেছিলেন। আদালতের বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। আজ ১৮ এপ্রিল পুনরায় আদালতে জামিন আবদেন করা হলে আদালতের বিচারক জামিন না মঞ্জুর করেছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজার রহমান এ এ্যডভোকেট আশফাকুল ইসলাম রাজু। আর আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, এ্যাডভোকেট রায়হান নবী এ এ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম।
মোঃ নেওয়াজ মোর্শেদ নোমান,
জয়পুরহাট
০১৭১৩৭১৩৬৩০