চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে এক সাংবাদিকের ওপর দুই দফা হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবং সাংবাদিকদের বাসা, বাড়িতে ভাংচুর, মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায়- সিলেটের ডিআইজির নিকট ওসি রাশেদ এবং তদন্ত ওসি মোস্তফা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী সাংবাদিক আব্দুল জাহির বাদী হয়ে গত ৬ জুলাই বৃহস্পতাবার এ অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে তার ওপর দুই দফা হামলা করে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মিয়াসহ পাঁচজনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। এ ঘটনায় চুনারুঘাট থানা পুলিশ মামলা না নিলে, মামলা করা হয় আদালতে।
আদালতের নির্দেশে এই মামলা রেকর্ড হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই আবদুল জাহির মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির পাল্টা মামলা করেন আসামী সায়েম এর বন্ধু ছাত্রলীগের কর্মী মহিবুর রহমান। মামলায় আরও আসামি করা হয় উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক রাজু কে। মামলার পরই পুলিশ আবদুর রাজ্জাক রাজু কে ঈদের দিন মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করে। পাঁচ দিন কারাভোগ শেষে জামিন পান তিনি। আবদুল জাহির মিয়ার বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার হারাজুড়া গ্রামে। তিনি দৈনিক সিলেট পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি। আব্দুল জাহিরের দায়ের করা মামলায় কোনো আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। অথচ তার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কর্মী মামলায় পুলিশ আরেক সাংবাদিককে ঈদের দিন মধ্য রাতে অমানবিক ভাবে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। আব্দুল জাহির বলেন, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। ওসি রাশেদুল হক ও তদন্ত ওসি গোলাম মোস্তফা আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছেন। যা নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ছাত্রলীগের নেতারা মামলা তুলে নিতে তাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
তাই তাঁরা বাড়িতেও থাকতে পারছেন না। এ ছাড়া তাকে আরও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। মামলার অভিযোগে আব্দুল জাহির বলেন, সম্প্রতি সাতছড়ি বনের গাছ পাচার নিয়ে দৈনিক সিলেট পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মিয়া ক্ষিপ্ত হন। গত ২৩ জুন দুপুরে চুনারুঘাট উপজেলার চণ্ডীছড়া মাজারের সামনে সায়েম ও উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য সাজিদ মিয়ার নেতৃত্বে পাঁচজন আবদুল জাহিরের ওপর হামলা হয়। আহত সাংবাদিক রাতে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে তাঁর ওপর আবারো হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতারা। আবদুল জাহির ২৫ জুন হবিগঞ্জ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সায়েম মিয়া, সাজিদ মিয়াসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলার আবেদন করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। ২৭ জুন মামলাটি থানায় রেকর্ড হয়। মামলা রেকর্ড হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই ঈদের দিন রাতে আবদুল জাহির মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির পাল্টা মামলা করেন ছাত্রলীগের কর্মী মহিবুর রহমান। মামলায় একই উপজেলার বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকার চুনারুঘাট উপজেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আবদুর রাজ্জাককেও আসামি করা হয়।
ঈদের দিন মধ্যরাতেই পুলিশ আবদুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাঁকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় থানার সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা হয়। আবদুর রাজ্জাকের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে গত সোমবার আদালতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।মঙ্গলবার জামিন পান আবদুল জাহির মিয়া। আবদুল জাহির বলেন, মঙ্গলবারও চুনারুঘাট শহরে বিভিন্ন স্থানে তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামিদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। মামলা দায়েরের প্রায় ১০-১১ দিন হয়ে গেলেও পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। তিনি আরও বলেন, মামলা তুলে নিতে তাঁকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভয়ে এখন বাড়িতে থাকেন না। থানার দুই ওসির এমন কার্যকলাপে তিনি মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বীগ্ন।
এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান সাংবাদিক আব্দুল জাহির। চুনারুঘাট থানার ওসি রাশেদুল হক বলেন, সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনাটি সত্য নয়। এজন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলা এফআইআর করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।