রাজশাহী (দূর্গাপুর) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের সদ্য নির্মিত একাধিক ঘর ফাটল ধরেছে এবং ঘর নির্মাণে করা হয়েছে নানা অনিয়ম। এজন্য আতংকের মধ্যে বসবাস করছেন এসব ঘরের বাসীন্দারা।
তবে দূর্গাপুরে ৩১২ টি আশ্রয় প্রকল্পের আওতায় ঘর দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত অনেক ঘর নির্মাণও হয়নি এবং ঘরে উঠতে পারেনি ভূমিহীন, গৃহ-হীন পরিবারেরা অথচ দূর্গাপুর উপজেলাকে ভূমিহীন নেই বলে দাবি করা হয়েছে কিন্তু যাদেরকে ঘর দেওয়া হয়েছে তাদের অধিক অংশই ভূমিহীন নয়। তাদের ন্যূনতম কিছু জমি জায়গা আছে। দূর্গাপুর উপজেলার ঘর না পাওয়া ভূমিহীন পরিবারগুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এই ঘর এগুলোর তদন্তের জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে দূর্গাপুর উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, ঝালুকা ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প ২ এর ৪র্থ পর্যায়ে ১৫ টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬থেকে ৮টি ঘরে ফাটল ধরেছে। একই ইউনিয়নের আমগাছি গ্রামের ১২ টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে সুবিধাভোগীদের বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনো তারা ঘরে উঠতে পারেনি। ঘর এবং টয়লেটির কাজ এখনো রয়েছে অসম্পূর্ণ।
আবার বৃষ্টি এলে প্রায় প্রতিটি ঘরেই পড়ে পানি বাতাসে টিনের চালা উড়ে উড়ে যেতে লাগে বলেও অভিযোগ রয়েছে,নিম্ব মানের কাজ সম্পন্নের কারনেই এ অবস্থা সৃষ্টি হযেছে। তাছাড়া ঘরের দেয়ালে সাদা চুন ওরং করা হয়েছে দায়সারা ধরনের।
স্থানীয়রা বলছেন, ২০২০ -২০২১ অর্থ বছরের আশ্রয়ণ প্রকল্প২,এর কাজে দায়সারা ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। নির্মিত ঘরগুলোতে নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যবহার ও প্রাক্কলনে অনেক ফাঁকি দেয়া হয়েছে।
এড়াও মিস্ত্রী ও লেবারদের হাতের কাজেও নানা ধরনের ফাঁকি ছিল।একটি সুত্র দাবি করেছে,মিস্ত্রীদের একটি দল সাব ঠিকা নিয়ে কাজ সম্পন্ন করেছে। যে কারণে তারা বেশি মুনাফার লোভে কাজে সীমাহীন দুর্নীতি অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে।ঝালুকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ফাজিয়া বলেন, সরকারের দেয়া উপহার ঘর পেয়ে তিনি খুশি কিন্তু নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছে ঘরগুলোতে। তাদের এ আশ্রয়ণ পল্লীতে ১৫টি ঘর দেয়া হয়েছে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘরের ভিতরে দেয়াল ফাটল ধরেছে। কখন যেন ভেঙ্গে পড়ে যায়। এই আশংকায় দিন কাটছে তাদের। বৃষ্টি বাদলের সময় ঘরে পানি পড়ে। এজন্য বৃষ্টির সময় ঘরে বসে থাকতে হয়।
ঝালুকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী সরবিনা বলেন, সরকারি ঘরের খোঁজখবর কেউ নেয় না। ঘর নির্মাণের আগে রাস্তা নির্মাণ করার কথা ছিল,তাও করা হয়নি। যাতায়াতের ব্যবস্থাও ভাল নয়। ঘর বরাদ্দ পেয়েও অনেকে সুখী নন। তাছাড়াও উপজেলা প্রশাসন ঘর বরাদ্দ দিয়েই তাদের দায়িত্ব সেরেছেন। পরবর্তীতে আর কোন ধরনের খোঁজ খবর নিচ্ছেন না।
কয়মজামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ছবেদা বেওয়া বলেন, সরকারি ঘর পেয়ে তারা খুশি কিন্তু ফাটল ধরা ঘরে বাস করতে ডর করছে। জোড়াতালি দিয়ে ফাটল বন্ধ করা হলেও কোন কাজ হয়নি। একই এলাকার আয়নাল হক বলেন, ঘর বানানোর আগে মাপ যোগ করা হয়েছে। অথচ এখনো যাতায়াতের রাস্তা করে দেয়া হয়নি।
আশ্রয়ণ কেন্দ্রে এসে তারা অনেক ঝুকিতে রয়েছে। রাস্তা মেরামতের অভাবে ১২ পরিবারের অনেক কষ্টে দিন কাটছে। আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসনীন্দারা সকলে নিম্নবিত্ত। অনেকেই ভ্যান চালায়। শ্রম বিক্রি করেও অনেকে সংসার চালায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণে রিক্সা-ভ্যান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন কেউ কেউ।
এদিকে,দেবীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৭ ঘরের বেশি ভাগ ঘরেই একই অবস্থা বলে উপকারভোগিরা অভিযোগ করেন। নানা, অনিয়মের কারণে প্রকল্প নির্মিত ঘর গুলোতে এখনো বসবাস করতে আসেনি অনেক উপকারভোগিরা।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ উপলক্ষে ভুমিহীনদের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সে ঘরের ঠিকাদার উপজেলা প্রশাসন। যে কারণে এসব কাজের মধ্যে নানামুখী অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হলেও কোন তদারকী ছিল না। নিম্নমানের কাজে বাধা দিয়েও কেনো কাজ হয়নি।
উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ঘরগুলো জরুরী ভিত্তিতে তদন্তের দাবি করেছেন একাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসীন্দা।
দূর্গাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহাবুবা আক্তারের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল করেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা বলেন, ‘যদি কোনো ঘরের কোনো জায়গায় ফাটল বা কোনো ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ঠিক করে দেব। আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ জানাইনি আপনার কাজ থেকেই জানতে পারলাম। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।