রাজশাহীর পুঠিয়ার ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষ ভাড়া দিয়েছেন। ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা পারছে না জাতীয় সংগীত, শেখানো হয় না নিয়মিত। শুধু শিক্ষকরা নয়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারও ঠিক মত অফিসে দেখা যায় না। শিক্ষার মানও প্রশ্নবিদ্ধ!
পুঠিয়ার এক স্কুলের শ্রেনী কক্ষ দিয়েছে ভাড়া, শিক্ষার্থীরা পারে না জাতীয় সংগী!
রাজশাহীর পুঠিয়ায় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারী শিক্ষকরা প্রতিদিন নিয়ম করে আসেন দেরিতে। যথাসময়ে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয় না। ওই প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ রাই জানে না জাতীয় সংগীত এমনকি কত দিন আগে স্কুলে জাতীয় সংগীত পড়ানো হয়েছে সেটাও ভুলে গেছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৬ আগস্ট) এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে মিলেও এর সত্যতা। সকাল ৯ টার সময় মাত্র একজন সহকারী শিক্ষিকা ছাড়া কেউই উপস্থিত ছিল না। পরে কেউ বেলা সাড়ে নয়টা আবার কেউ বেলা দশটার দিকে বিদ্যালয়টিতে আসতে দেখা গেছে। আবার কেউ সকাল দশটার দিকেও স্কুলে ঢুকছেন। যেন নিজের ইচ্ছে মত চলে এই স্কুলের কার্যক্রম। স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা তিনিও এসেছেন ৯ঃ৩৩ মিনিটে। এই একই চিত্র প্রতিদিনের। বিদ্যালয়টির শ্রেণীকক্ষ প্রাইভেট পড়ানোর জন্য ভাড়া দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হেড মাস্টার মোসা: ফারুকনাজ বেগম এর উপর। প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারী শিক্ষকরা সময় যতই বাজুক, স্কুলে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় সই করছেন সকাল ৯ টায় উপস্থিত দেখিয়ে।
অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েক মাস ধরে নজর রাখে অনুসন্ধানী একটি দল। এরপর সোমবার স্কুলটিতে সাংবাদিকরা হাজির হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে শুনতে চায় জাতীয় সংগীত। কোন শিক্ষার্থী জাতীয় সংগীত বলতে পারছেন না। এমনকি শিক্ষার্থীরা শিক্ষার দিকে রয়েছে ব্যাপক পিছিয়ে। তবে ওই স্কুলটির শ্রেণিকক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে অন্য আরেকটি স্কুলের শিক্ষক অমল ঘোষ নামের এক শিক্ষক এর কাছে। তিনি সকাল বিকাল দুই বেলা প্রাইভেট পড়ায় সেখানে। বিনিময়ে ভাড়া পান ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষিকা মোসা: ফারুকনাজ বেগম।
শিক্ষার যখন এই হাল, তখন সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে জানতে গেলে, দেখা যায় তিনিও নেই অফিসে। তখন ঘড়ির কাটায় বাজে ১১টা। তার বাসায় নাকি এসেছে আত্মীয়-স্বজন তিনিও শিক্ষা অফিস ছেড়ে বাসায় করছেন আত্মীয়তা। আসতে পারবেন দুপুর বারোটার দিকে।
শিক্ষার যখন এই পরিস্থিতি, তখন শিক্ষা কর্মকর্তাও বাসায়। তবে কি এভাবেই চলে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা এমনটাই প্রশ্ন করছেন অভিভাবক ও সাধারণ মানুষরা। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা সহ শিক্ষকরা বলছেন বিভিন্ন কারণে তাদের এভাবে স্কুলে আসতে দেরি হয়।
শ্রেণিকক্ষ ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট পড়ানো, অন্য আরেকটি স্কুলের শিক্ষক অমল ঘোষ তিনি বলেন, আমি সকাল ৮:৫০ মিনিটে প্রাইভেট পড়ানোর কাজ শেষ করি। তারপর আমার স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। স্কুলের নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন অল্প একটু সময় পার হয়।
এত সবকিছুর পরেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে হাস্যোজ্জ্বল মুখেই সাংবাদিকদের বলছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ বি এম ছানোয়ার হোসেন, আমি অফিসে নাই মানে এদিকে একটু সমস্যার মধ্যে আছি। আমার আসতে প্রায় বারোটা বাজতে পারে। প্রতিদিন আমার দেরি হয় না, আজকে আমার বাসায় গেস্ট এসেছে। আপনি লিখিত অভিযোগ দিয়ে যান আমি ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম ইনশাল্লাহ আমরা অ্যাকশনে যাব।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একে এম নূর হোসেন নির্ঝর তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষ ভাড়া দেওয়া রীতিমতো খুবই খারাপ কাজ, বিষয়টি আমি দেখছি।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: সাইদুল ইসলাম বলেন, কিছু কিছু জায়গা থেকে এমন অভিযোগ আসছে। আপনারা যেগুলো বলছেন এগুলো অবশ্যই গুরুতর অভিযোগ। তবে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে আমি দেখছি।