আব্রাহাম লিংকন: যার জন্য পৃথিবীর আলোর মুখ দেখে প্রতিটি সন্তান, তিনি হলেন মা। পৃথিবীতে যদি কেউ নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসতে পারেন, তিনি হলেন মা। দুঃখে ও সুখে প্রতিটি সময় যিনি স্নেহ ভালোবাসায় আপনার পাশে থাকেন, তিনি হলেন মা। আর মায়ের ভালবাসা পেতে কখনো প্রয়োজন হয় না ভালবাসি বলা। বিশ্ব মা দিবস আজ। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্ব মা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যদিও মাকে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা জানানোর কোনো দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না- তবুও মাকে গভীর মমতায় স্মরণ করার দিন আজ।
প্রাচীন গ্রিসে বিশ্ব মা দিবসের পালন করা হলেও আধুনিককালে এর প্রবর্তন করেন এক মার্কিন নারী। ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিস নামের নারী মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশ সহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
জগতে মায়ের মতো এমন আপনজন আর কে আছে! তাই প্রতি বছর এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় প্রিয় মায়ের মর্যাদার কথা।
বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি রইলো
অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
বাঘ, সিংহ কিংবা ভালুকের নাম শুনলেই ভয়ে অস্থির হয়ে যায় সবাই। কিন্তু এরা যত হিংস্র আর ভয়ংকরই হোক না কেন, নিজের বাচ্চাদের কাছে সবচেয়ে ভালো মা। অন্যদের কাছে হিংস্র হলেও বাঘের বাচ্চার জন্য মা-বাঘই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। একই কথা খাটে সিংহ, ভালুক, গন্ডার ও হাতির মতো ভয়ংকর প্রাণীর বেলায়। আসলে পৃথিবীর অধিকাংশ জীবজন্তুর মায়েরাই তাদের বাচ্চার ভরসার জায়গা। সেখানে হিংস্র, মাংসাশী কিংবা বিদঘুটে—এসব কোনো ব্যাপারই নয়। তাই তো কাজী কাদের নেওয়াজ ছড়ায় বলেছেন, ‘মা কথাটা ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই/ মায়ের চেয়ে এমন আপন ত্রিভুবনে নাই।’
এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় মাকড়সার মধ্যেও। ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার কয়েকটি দেশে ব্ল্যাক লেক ওয়েভার নামের একধরনের মাকড়সা পাওয়া যায়। মা-মাকড়সা ডিম পেড়ে নিজের দেহে বহন করে বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত। একসময় ডিম ফুটতে শুরু করে। ক্ষুধার জ্বালায় ছোট ছোট বাচ্চা মায়ের দেহই খেতে শুরু করে। সন্তানদের মুখ চেয়ে মা নীরবে হজম করে সব কষ্ট। একসময় মায়ের পুরো দেহই চলে যায় তাদের পেটে। মৃত মা পড়ে থাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে।
সাগরের পরজীবী প্রাণী সি লাইস বা সামুদ্রিক উকুনের মায়েদের গল্পটাও মাকড়সাদের মতোই। এরা একসঙ্গে অনেক ডিম দেয়। এ থেকে তাদের পেটের ভেতরেই কয়েক ধাপে বাচ্চা ফোটে। এই বাচ্চাগুলো মায়ের দেহ খেয়ে বেঁচে থাকে। একসময় পুরো দেহ খাওয়া হয়ে গেলে তারা বাইরে বেরিয়ে আসে।
সাগরের আরেক আত্মত্যাগী মা হলো অক্টোপাস। প্রজাতিভেদে এরা একসঙ্গে প্রায় ২০ হাজার থেকে দুই লাখ ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর পরবর্তী ৩০ দিন অক্টোপাস পাহারা দেয়। এসব করতে গিয়ে খাওয়াদাওয়া একেবারেই বাদ দেয় মা-অক্টোপাস। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে দায়িত্ব শেষ হয় মায়ের। কিন্তু তত দিনে না খেতে খেতে দুর্বল হয়ে পড়ে তারা। তাই বাচ্চা জন্মের পরই শিকারি প্রাণীর হাতে মারা পড়ে মা-অক্টোপাস।
স্থলের সবচেয়ে বড় প্রাণীকে একটি ক্যাটাগরিতে সেরা মায়ের পুরস্কার দিতেই হবে। কারণ, টানা ২২ মাস পেটে ধরে (প্রাণীজগতে সবচেয়ে বেশি সময়) ২৫০ পাউন্ড ওজনের বাচ্চার জন্ম দেয় মা-হাতি। জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাঁটতে শেখে হাতির বাচ্চা। কিন্তু তার পরও মা ছাড়া তাদের কোনো গতি নেই। মা-হাতিকেই তার বাচ্চার সব দায়িত্ব পালন করতে হয়। হাতির বাচ্চা প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লিটার দুধ পান করে।
মা হিসেবে কম যায় না সিংহও। জন্মের সময় সিংহের বাচ্চা থাকে পুরো অন্ধ। এ সময় তার সব দেখভাল করে মা-সিংহ। চার মাস বয়সে বাচ্চারা শিকার ধরা শেখে। তবে দুই বছরের আগে এরা পুরোমাত্রায় শিকারে বের হয় না; তত দিন মায়ের শিকারের ওপর নির্ভর করে। একই নিয়ম চিতাদের বেলায়। চিতা একসঙ্গে চার থেকে ছয়টি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চারা জন্মের ৯০ থেকে ১০৫ দিন পর্যন্ত অন্ধ থাকে। তবে ধীরে ধীরে এরা দেখার ক্ষমতা পায়। ১৩ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত এরা মায়ের কাছেই বড় হয়। এ সময় এরা শিখে নেয় বনের বৈরী পরিবেশে বেঁচে থাকার নিয়ম। মা-ই এদের বড় শিক্ষক।
সেরা মায়ের তালিকায় আরও আছে ওরাংওটাং। মানুষের পর এরাই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বাচ্চা লালনপালন করে। প্রায় নয় বছর বাচ্চাকে নিজের কাছেই রাখে মা-ওরাংওটাং। এ সময় বাচ্চার সব দায়িত্ব মায়ের। এ ছাড়া বাচ্চাকে শিকার ধরা, খাদ্য আর অখাদ্য চেনানোসহ সব শিক্ষা দেয় মা। এ রকম সেরা মায়েদের তালিকায় আরও আছে পান্ডা, মেরু ভালুক, ডলফিন, তিমিসহ অনেক প্রাণী।