নিজস্ব প্রতিবেদক:সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীকে আর কখনও ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে রাসিক ভবনের সিটি হলরুমে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় মেয়র এ মন্তব্য করেন। রাসিক মেয়রের উদ্যোগে ‘অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভায় নগরীর শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট নাগরিক, আইনজীবী, সংস্কৃতি কর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও নারীনেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাটা জীবন শ্রম, সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। কিন্ত তিনি তার নীতি-আদর্শে আপোস করেননি। বঙ্গবন্ধুর সেই অসাম্প্রদায়িক স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ছেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন স্বাধীনতা বিরোধীচক্র দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টায় লিপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থেকে সেই অপশক্তির অপতৎপরতাকে রুখে দিতে হবে।
মেয়র লিটন বলেন, বিএনপি বলছে, ‘তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসবে না, নির্বাচন হতে দেবে না’। তাদের এই কথার মধ্যে যে নাশকতার মতলব ছিল, সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। রাজশাহীতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোকে আরও সুসংগঠিত করা হবে। যাতে যখনই প্রয়োজন হবে, আমরা সবাই একসাথে ঝাপিয়ে পড়তে পারি। আগামীতেও এই ধরনের সভা অব্যাহতভাবে আয়োজন করা হবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিটন বলেন, রাজশাহীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান। এই সম্প্রীতি বজায় রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ইতোমধ্যে রাজশাহী দেশে ও দেশের বাইরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, আলোকায়ন, শান্তি ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। এখন রাজশাহীর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হবে।
রাজশাহীর অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটা জায়গায় সফল হতে যাচ্ছি। সেটি হলো নানা আলোচনার পরে বাংলাদেশ-ভারতে নদী পথে যে বাণিজ্য সেটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে মায়া থেকে সুলতানবাদ হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত নদীপথে পাথর, ফ্লাইএশ ইত্যাদি মালামালি নিয়ে যাওয়া-আসা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় রাজশাহীকেও আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ কাজে মতামত, পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সকলে পাশে থাকবেন বলেও প্রত্যাশা করেন মেয়র লিটন।
স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল খালেক, রাবি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বেগম আখতার জাহান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শামসুদ্দিন খোকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর শামসুল আলম (বীর প্রতীক), কুবিকুঞ্জের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী এ্যাডভোকেট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাড. ইব্রাহিম হোসেন বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো এমন সভার আয়োজন করায় রাসিক মেয়রকে ধনবাদ জানান।
বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীচক্র দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির নেতৃত্ব ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বিপন্ন করার জন্য আজ নানাবিধ অপতৎপরতা ঘটিয়ে চলেছে। এমতাবস্থায় স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই।
তারা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত সংর্ঘষ ও রেল লাইন সহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। পরবর্তীতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সেক্ষেত্রে সবাইকে আরো বেশি সজাগ থাকতে হবে।
রাবি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ঘটনাতে নিয়ন্ত্রণ করতে মেয়র মহোদয় সব সময় পাশে ছিলেন। এজন্য মেয়র মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই।
এসময় রাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর আবুল কাশেম, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, রাবি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান, রাবির অধ্যাপক আ.ন.ম ওয়াহেদ, স্বাচিপ রাজশাহী জেলা সভাপতি ডা. চিন্ময় কান্তি দাস, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তানবিরুল আলম, সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. হামিদুল হক, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান, দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলী, রাজশাহী বেতার শিল্পী সমিতির সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম বকুল, বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ কামরুজ্জামান, নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ওলিউল আলম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জিল্লর রহমান, সাংস্কৃতিক কর্মী ঋষভ, ব্যবসায়ী এহসানুল হুদা দুলু, কবি কামরুল বাহার আরিফ, নাট্যকার সেলিম জাহাঙ্গীর, আরডিএর নগরপরিকল্পনাবিদ কামরুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।