ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গতকাল ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সকাল সাড়ে ১১ টায় আরএমপি’র মতিহার বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মধুসুদন রায়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মো: মোবারক পারভেজের দিকনির্দেশনায় এসআই মো: মফিজুল ইসলাম ও তাঁর টিম থানা এলাকায় নিরাপত্তা ডিউটি করছিলো। এসময় তাঁরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটের সামনে একটি পাঁচ বছরের শিশুকে কাঁদতে দেখে। এসআই মো: মফিজুল ইসলাম শিশুটির কাছে তার নাম ঠিকানা জানতে চায়। শিশুটি তার নাম আব্দুল সোবহান ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারে না। আশপাশের লোকজনও তাকে চিনতে পারে না। তখন মতিহার থানা পুলিশের ঐ টিম শিশুটিকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করে কান্নাকাটির কারণ ও ঠিকানা জানতে চায়। তখন শিশুটি জানায়, তার বাড়ি হিলি বর্ডার। সে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে রাজশাহীতে এসেছিল।
পিতার কোলে মতিহার থানা পুলিশ কর্তৃক উদ্ধারকৃত শিশু সোবাহান
পরবর্তীতে মতিহার থানা পুলিশ শিশুটির প্রকৃত পরিচয় জানার জন্য দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর থানায় যোগাযোগ করে জানতে পারে সে থানায় একটি শিশু নিখোঁজের জিডি হয়েছে। সেখানে শিশু সোবাহানের পরিচয় শনাক্ত হয়। পরিচয় শনাক্তের পর শিশু সোবাহানের পিতা শাহিনুর ইসলাম মতিহার থানায় আসেন। মতিহার থানা অফিসার ইনচার্জ আজ ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ (২৬ ডিসেম্বর দিবাগত) রাত ১ টায় শিশু সোবাহানকে তার পিতার কাছে ফিরিয়ে দেন। ছেলেকে ফিরে পেয়ে শাহিনুর ইসলাম আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শাহিনুর ইসলাম জানায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে সোবাহানের মায়ের সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়। ডিভোর্সের পর সোবাহানের মায়ের রাজশাহীতে বিয়ে হয় এবং সেও অন্যত্র বিয়ে করে। শাহিনুর বর্তমানে দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর থানার বাসুদেবপুর গ্রামে বসবাস করেন। সেখানে শিশু সোবাহান তার বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গে থাকতো । গত ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ শিশুটি’র নিজ মা রাজশাহী থেকে তার বাবার বাড়ি হিলিতে বেড়াতে যায়। যাওয়ার সময় শিশু সোবাহানকে নিয়ে যায়। সেখানে দুইদিন রাখার পর গত ২৩ ডিসেম্বর শিশুটির মা তাকে আবার তার বাবার কাছে রেখে রাজশাহী ফিরে আসেন। এদিকে শিশু সোবাহান মায়ের মমতা সার্বক্ষণিক পাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে উঠে। এরপর সে গত ২৪ ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে জয়পুরহাট রেল স্টেশনে এসে রাজশাহীর ট্রেনে উঠে রাজশাহীতে চলে আসে। রাজশাহীতে ট্রেন থেকে নেমে তার মাকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু মায়ের ঠিকানা না জানায় সে টার্মিনালে রাত্রী যাপন করে। এরপর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে এসে কাঁদতে থাকে। পরে মতিহার থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
শিশু সোবাহানকে ফিরে পেয়ে তার বাবা শাহিনুর ইসলাম অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি আরএমপি’র মতিহার থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।