নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগর যুবলীগের কাউন্সিল ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কাউন্সিল ঘিরে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঝে নানামুখী মেরুকরণ শুরু হয়েছে। পছন্দের প্রার্থীকে শীর্ষ পদে বসাতে তারা জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সমর্থিত প্রার্থীদের ঠেকাতে প্রতিপক্ষরা বহুমুখী তৎপরতা শুরু করেছে। গোপনে টাকার খেলা চলার অভিযোগও উঠেছে। পদপ্রত্যাশীরাও নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে মহানগর যুবলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৯ জন দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে এ দুই পদের কোনোটিতেই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারও নাম শোনা যাচ্ছে না। অন্য প্রার্থীদের টাকার প্রভাব ও তদবিরের চাপে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারা ছিটকে পড়ছেন। শীর্ষ দুই পদের আশা ছেড়ে দিয়ে তারা যে কোনো একটা পদ পাওয়ার শেষ চেষ্টা করছেন। মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তৌরিদ আল মাসুদ রনি ও নাহিদ আক্তার নাহানের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। রনি বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নাহান আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। রনি ও নাহানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে অনেকে তাদের অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ের নেতিবাচক ছবি ও ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রনি ও নাহান বলছেন, কাউন্সিল সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ছবি ছড়ানো হচ্ছে। তবে এগুলো পুরোপুরি ফেক (ভুয়া)। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করা হচ্ছে। রনি ও নাহানকে রাসিক মেয়র লিটন সমর্থন করায় তাদের ঠেকাতে লিটনবিরোধীরা উঠেপড়ে লেগেছে। দুই পক্ষের রেষারেষিতে নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে বলছেন, নেতৃত্ব কেনাবেচা হলে তা হবে আত্মঘাতী। উপযুক্তদেরই নেতৃত্বে আনা উচিত।
যুবলীগের কাউন্সিল ঘিরে সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিটন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই তৎপর হয়ে উঠেছেন। শীর্ষ পদগুলোতে নিজেদের অনুসারীদের বসাতে চাইছেন তারা। এজন্য তারা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। লিটনের প্রতিপক্ষ হিসাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ অনেক নেতা ভেতরে ভেতরে রনি ও নাহানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি লিটনঘনিষ্ঠ অনেক পদপ্রত্যাশীও গোপনে গোপনে রনি-নাহানের বিরোধিতা করছে। লিটনবিরোধীদের অভিযোগ-সভাপতি পদে এগিয়ে থাকা রনি বড় মাপের একজন ঠিকাদার। দলের আশীর্বাদে এক যুগের বেশি সময় ধরে সিটি করপোরেশন, আরডিএসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি একচেটিয়া কাজ করছেন। বিএনপির সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সময়েও রনি রাসিকের অনেক কাজ করেছেন। নিজের ব্যবসার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে তিনি ভারসাম্য রেখে চলেন। নেতাকর্মীদের মতে, সংগঠনের জন্য রনি বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেন। তার চেম্বারের সামনে দিন-রাত নেতাকর্মীদের ভিড় থাকে। এ কারণে রনিকে যুবলীগের সভাপতি পদে দেখতে চায় সিংহভাগ নেতাকর্মী।
তৌরিদ আল মাসুদ রনির দাবি, ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগে এসে তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। আগামী দিনে সুযোগ পেলে যুবলীগকে তিনি আরও শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করবেন। ব্যবসা করায় যে কারও সঙ্গে তার সম্পর্ক রাখতে হয়। এটা কোনো অন্যায় নয়। এসব বিষয়কে প্রতিপক্ষরা নেতিবাচক হিসাবে সামনে আনছেন। এগুলোর কোনো বাস্তবতা নেই। ছাত্রলীগ নেতা এসএম গোলাম মোর্শেদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নাহান। এ মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে আছেন। প্রতিপক্ষরা এটাকে সামনে এনেছে। নাহিদ আক্তার নাহানের দাবি-গোলাম মোর্শেদ হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার পুরো পরিবারকে আসামি করা হয়েছিল। এটাকে এখন অপপ্রচারের হাতিয়ার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দলে তার অবদান কম নয়। এ সবকিছু নেতাকর্মীরা বিচার করবেন। মহানগর যুবলীগের কাউন্সিল উপলক্ষ্যে নগরীজুড়ে সাজসাজ রব। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা জাতীয় নির্বাচনের রূপ পেয়েছে। নগরীর অলিগলি ও সড়কদ্বীপ রঙিন পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুনে সয়লাব হয়ে গেছে। সভাপতি পদে ১০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাউন্সিলরদের ভোট ছাড়াই কেন্দ্র থেকে যুবলীগের নেতৃত্ব ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে। মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী বলেন, এ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে। এতে যুবলীগ আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারবে।