রাজশাহীঃ শিক্ষকরা সমাজের বিবেক। শিক্ষকরা হচ্ছেন দেশ গড়ার প্রধান নিয়ামক শক্তি। সেই সম্মান, মর্যাদা, স্মৃতিচরন ধরে
রাখতে রাজশাহীর দাকুমড়া হাট স্কুলের সম্মানিত
শিক্ষক মরহুম জয়নাল আবেদীন স্যারের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহতালার কাছে দু’হাত তুলে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার(১২সেপ্টেম্বর)সকাল ১১টার সময়
শিক্ষক মরহুম জয়নাল আবেদীন স্যারের স্নেহের ছাত্ররা এই আয়োজন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন রিভারডেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম, রিভারডেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের(ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক)মো: রাকিব উদ্দিন রাজন।
আরও উপস্থিত ছিলেন বিন্দারমাপুর জামে মসজিদের
পেশ ইমাম, মাওলানা মুস্তাকিমুল ইসলাম এবং স্যারের প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দরা।
সম্মানিত শিক্ষক মরহুম জয়নাল আবেদীন স্যার দীর্ঘদিন যাবৎ ৩৫বছর দামকুড়া হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্মানের সাথে শিক্ষকতা করেন।তিনি ফুলবাড়ির দেওপাড়া ইউনিয়নের গোদাগাড়ী থানার রাজশাহী জেলায় বসবাস করতেন। শিক্ষকতা জীবন নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ থাকার পর ২০২২সালে ১আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
এসময় ছাত্র রিভারডেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন,তিনি আমাদের বাংলা ২য় পত্র পড়াতেন। একজন ধার্মিক এবং আল্লাহভিরু মানুষ ছিলেন। স্যারের কথার মায়ায় আটকা পড়েননি এমন ছাত্র খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। বাংলা ভাষায় স্যারের ছিল স্পষ্টভাষী,সেখান থেকেই আমারও বাংলার প্রতি প্রেম, আমি নিজেও বাংলা পড়াই। স্কুল জীবনে স্যারকে খুব ভয় পেতাম,স্যার ছাত্রদের হাট-বাজরে ঘুরতে দেখলে কাছে ডেকে নিতেন,উপযুক্ত কারণ দর্শাতে না পারলে কান মলা দিতেন, আমি নিজেও একবার কান মলা খেয়েছি। স্যারের ক্লাসে ওয়াশরুমে যাব বললে কাছে ডেকে পেট টিপে দেখতেন সত্যিই তার ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন আছে কি না, এভাবে তিনি মজাও করতেন।
অসম্ভব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। ছাত্রদের খুব ভালোবাসতেন, বিশেষ করে যারা পড়াশোনায় ভালো ছিলো তাদের খুব আদর-স্নেহ করতেন। এলাকার কোন ছেলে-মেয়ে কে কোথায় পড়াশোনা করছে তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখতেন। আমার ছোট ভাই পোড়াশোনায় ভালো ছিলো,সেজন্য স্যার প্রায় তার কথা জিজ্ঞাসা করতেন। স্যারের শেষ জীবনে আমরাই ছিলাম স্যারের গল্প আড্ডার সঙ্গী। স্যারের ছেলেবেলা, ইতিহাস,ঐতিহ্য, রাজনীতি নানা বিষয় নিয়ে আমাদের আড্ডা চলত। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। আমার খুব ভালোভাবে মনে আছে স্যার অসুস্থ হবার পর দামকুড়া হাটে তেমন আসতে পারতেন না, একদিন স্যার আমার মাথা ও মুখে হাত দিয়ে আদর করলেন এবং বললেন অসুস্থতার কারনে বাসা থেকে একা বের হতে দিতে চায় না আর মনে হয় না বেশি দিন এভাবে তোমাদের সাথে দেখা করতে পারবো! বড় মায়াভরা চোখে মুখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন।
স্যারের কথাগুলো প্রায় কানে বাজে, চোখ বন্ধ করলেই মায়াভরা মুখখানি ভেসে উঠে। অন্তর থেকে দোয়া করি মহান আল্লাহতালা আমাদের প্রিয় স্যারকে দুনিয়াতে যেমন সম্মানিত করেছেন, পরকালেও তেমনি সম্মানিত পাবেন, আমিন বলে তিনি বলেন স্যারের জীবনের এবং আমাদের সাথে স্মৃতিচারণ বলে শেষ করা যাবে না। তাই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যতদিন বেঁচে থাকব সকল স্যারদের স্মরণ এবং স্মৃতিচারণ করব।