নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ১১নং গনিপুর ইউপির কাজীদের সঠিকতা যাচাই ও অবৈধ ভাবে ভূয়া কাজীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই গণশুনানির মাধ্যমে মূল কাজি ছাড়া এই ইউনিয়নে বিয়ে রেজিস্ট্রি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
কাজীরা জানান, এই ইউনিয়নে কাজী খাদেমুলের ছত্রছায়ায় জালিয়াতির মাধ্যমে কিছু ভুয়া কাজি বিয়ে রেজিস্ট্রি করছে। যেখানে জড়িত থাকছে অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোর কিশোরীদের জীবন। বিয়েগুলোও সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলছে। সংসারের চাপ সহ্য করতে না পেরে ২-৩ বছর পরই সংসার ভেঙে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কিশোর কিশোরীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। অনেক সময় বাল্যবিবাহে গর্ভধারণের সময় মৃত্যু হচ্ছে কিশোরীদের। এসব কথা ভেবে কয়েকজন কাজিসহ কাজি খাদেমুলকে তলব করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সুরাহা পেতে গণশুনানি ডাক দেয়া হয়। যেখানে পূর্ণ সহযোগিতার কথা জানান ইউএনও এ, এফ, এম, আবু সুফিয়ান।
গত মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত ৯টা দিকে বাগমারার গ্রামের (১১নং) গনিপুর ইউনিয়নে আব্দুল মতিনের মেয়ে মোসাঃ আফরোজা সহিত বর একডালা গ্রামের ফয়জুদ্দিনের ছেলে মোঃ জয়নালের সাথে বিবাহ্ রেজিস্ট্রী করেন।
নিয়ম বহিভূত ভাবে ভূয়া ভলিয়মে বিবাহ্ রেজিস্ট্রীর করানোর বিষয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ খাদেমুল ইসলামের মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার আমি ব্যস্ত ছিলাম। তাই আমার সহকারী মোঃ মোজাম্মেল হককে দিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রীর কাজ সম্পন্ন করানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রারের সহোযোগিতায় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার খাদেমুল ইসলাম তাঁর অধিক্ষেত্রের বাইরে (১১নং) গনিপুর ইউনিয়নে একাধিক সহকারী দ্বারা বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন করে থাকেন। প্রত্যেক সহকারীর নিকট অবৈধ্য বিবাহের ভলিউম বই আছে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
এসব বিষয়ের সত্যতার ভিত্তিতে সুষ্ঠু সমাধান করতে ১১নং গনিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যাড: মোঃ মনিরুজ্জামান (রঞ্জু) অভিযোগ ইউএনও বরাবর। সেখনে বলা হয়, গত ২০১৬ সাল থেকে গনিপুর ইউনিয়নে কাজী না থাকায় শ্রীপুর ইউপির কাজী মোঃ রেজাউল করিম এবং শুভভাঙ্গার কাজী মোঃ খাদেমুল ইসলাম এবং নতুন ভাবে কাজী মোঃ আব্দুল জব্বার কাজী হিসাবে দাবি করে আসছে। বিষয়টি জেলা রেজিষ্টারের কাছে সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য যোগাযোগ করলে জানা যায় এই ইউনিয়নে কাজি নেই। তারপরও কিছু কাজি ভলিউম বহি প্রদান করে সাইন বোর্ড তৈরী করেছে। সেই সাইনবোর্ডে তাদের ফোন নাম্বার সংযুক্ত করে এলাকার বিভিন্ন স্থানে পোষ্টারিংসহ নিজেরাই নিজেদেরকে কাজী হিসাবে দাবী করে আসছে। তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র/প্রমানাদি দেখতে চাইলে তারা তা না দেখিয়ে বরং দাপটের সাথে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে বিবাহ রেজিষ্ট্রি করিছে। এতে ইউনিয়নের জনসাধারন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি জেলা রেজিষ্টার ও বাগমারা উপজেলার সাব রেজিষ্টার-এর কাছে মৌখিক ভাবে অভিযোগ দিয়েও কোন সুরা হচ্ছেনা।
এ গণশুনানির দিনে কাজির সঠিকতা খুঁজে পেতে কাজি আব্দুল জব্বার, রেজাউল করিম ও খাদেমুলকে তলব করা হয়। কিন্তু এদিন কাজী খাদেমুল উপস্থিত হননি। তবে, কাচারীকোয়ালী পাড়ার চেয়্যারম্যান মোজাম্মেল হক গণশুনানির সময় উঁকি দিয়ে সালাম দিয়েই চলে গেছেন। যিনি কাজি খাদেমুলের মাধ্যমে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। কাজি খাদেমুলের অনুপস্থিতি উপস্থিত সকল কাজি, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয়কে অমান্য করেছেন বলে জানিয়েছেন কাজি সমিতির সভাপতি কাজী নুরুল আলম।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ, এফ, এম, আবু সুফিয়ান জানান, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় সজাগ। ওই ইউনিয়নের কাজিদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে জেনেছি। আজ তাঁদের উপস্থিতিতে সঠিক কাজি নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হলো। সঠিক কাজি নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত মূল কাজি ব্যতীত কেউ বিয়ে রেজিস্ট্রি করা থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় উপর্যুক্ত ব্যবস্থ নেয়া হবে।