বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কোয়ালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আবারও দুর্নীতি অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২৪ লক্ষ টাকার হিসাব চেয়ে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আলহাজ্ব ইয়াকুব আলীর পক্ষে রাজশাহী জেলা জজকোর্টের এক বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মোজাহারুল ইসলাম।
নোটিশের বরাত দিয়ে এডভোকেট মোজহারুল ইসলাম বলেন, কোয়ালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনিছার রহমান, ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ড থেকে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা আয় করেছেন। কিন্তু এই ছয় বছর যাবত তিনি প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র সভাপতি নিয়ে গোপনে হিসাব নিকাশ করেছেন।এ ছাড়া আর কাউকেই কোনরকম হিসাব দেননি, বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট অনুযায়ী মাত্র ১২০০ টাকা জমা রয়েছে বলে জানা গেছে । একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬ বছরের আয় ব্যয় অন্তে ১২০০ টাকা ক্যাশ থাকাটা রীতিমতো সন্দেহজনক।
উকিল নোটিশে প্রধান শিক্ষককে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হিসাব দিতে বলা হয়েছে, অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আদালতে দুর্নীতির মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী।
এদিকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা নিয়ে ও রয়েছে নানা দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে গোপনে রাতা-রাতি রেজুলেশন লিখে তাতে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে কোন দিন কোন মিটিং করা হয়নি, মাইকিং পোস্টার অথবা নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়নি ম্যানেজিং কমটিং গঠন করার সংবাদ। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কিংবা দাতা সদস্য কাউকে কিছু জানানো হয়নি। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনেও কোন মিটিং করা হয়নি। এমন অভিযোগ করেছেন যাদের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য বানানো হয়েছে তারাই। আবারও একই ব্যাক্তিকে সভাপতি বানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। টানা তিন বার একই ব্যাক্তিকে সভাপতি করার পেছনে কি কারন থাকতে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ছাত্র অভিভাবক অনেকেই জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক ঠিকমত স্কুল করেননা। তিনি প্রকৃত পক্ষে একজন কাপড় ব্যাবসায়ী। চাকুরীর চাইতে তিনি ব্যবসাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সপ্তাহের প্রতি সমবারে স্কুলে এসে কোন মতে হাজিরা দিয়েই তিনি অফিসের কাজের অজুহাত দেখিয়ে হাটে চলে যান। তাছাড়া এই ব্যাবসার কাজে তিনি মাসে তিন চার দিন পাবনা শাহাজাদপুরে মাল কিনতে যান। এ সবকিছুই তিনি অফিসের কাজের বাহানায় সভাপতিকে ম্যানেজ করে সুবিধা গুলো নিয়ে থাকেন। নির্ধারিত কর্ম ঘন্টা অনুয়ায়ী চলেনা এই বিদ্যালয় ৯.৩০ মি: হতে ক্লাশ শুরু করে বেলা ১২.৩০ মিনিটের মধ্যেই স্কুলটি ফাঁকা হয়ে যায়। তাছাড়া সভাপতি হাতে থাকায় বিদ্যালয়ের আয়-ব্যায়ের ঠিকমত হিসাব দিতে হয়না, টানা ৬ বছরে বিদ্যালয়ের প্রায় চব্বিশ লক্ষ টাকা তছরুপ করেছেন প্রধান শিক্ষক। এমন নানা দূর্নীতি ও অনিয়মে বিদ্যালয়টির বর্তমানে বেহাল অবস্থা।
জানা গেছে অষ্টম ও নবম শ্রেণীর রেজিঃ ফি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত এর থেকে অতিরিক্ত তিনগুন ফি আদায়ের লিখিত অভিযোগ গত ২০২০ সালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে করা হয়েছে। প্রায় ১ বছর ছয় মাস অতিবাহিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্র অভিভাবক মো: আয়নাল হক, মো: মতিউর রহমান, মো: শফিকুলইসলাম, মো: মোবারক হোসেন সহ কয়েকজন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বলেন। এই প্রধান শিক্ষক ইতি পূর্বে আরো অনেক অনিয়ম করেছেন। বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট, আম- কাঁঠাল বিক্রয় ও বিনা রশিদে টাকা আদায় করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন যার হিসাব তিনি গোপনে গোপনে করে থাকেন। এই মুহর্তে তার পদত্যাগ ছাড়া বিদ্যালয়ের উন্নতির আর কোন উপায় দেখছিনা।
তাঁর অনিয়ম আর দূর্নীতির কারনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এত খারাপ যে, তার প্রভাবে ২০২৩ ইং সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে মাত্র ০৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তী হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আনিছার রহমানের ০১৭১৭৯৭৭৬২৮ নম্বরে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।