এস এম নওরোজ হীরা বরিশাল:রমজানের প্রথম দিনেই অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার। এ সময়ের বাড়তি চাহিদার প্রায় সব পণ্যের দামই এখন বেশ চড়া। পুরো মাস এই বেসামাল বাজার পরিস্থিতি কিভাবে সামলাবে, সে আশঙ্কায় অস্বস্তিতে ভোক্তারা।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। দেড়-দুই মাস আগ থেকে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। বিশেষ করে মুরগি, মাংস, ডিম, সবজি, চিনি এবং বিভিন্ন মসলার দাম চড়ে গেছে। বাজারের এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা উদ্যোগ ও তোড়জোড় থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। আজ শুক্রবার বরিশাল নগরীর ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রায় সব কিছুর দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া।
সরেজমিনে সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে টমেটো ৩০টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০টাকা, গাজর ৪০টাকা, শসা ৫০, মুলা ৫০, চিচিংগা ৮০, বরবটি ১০০ টাকা, করোলা ৭০, লাউ ৭০ থেকে ১২০, মিষ্টি কুমড়া ২০ থেকে ৪০টাকা, ছোট ফুলকপি ৫০, পাতা কপি ৩০, লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৯০, গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০, পেপে ৩০, কাচ কলা ৩০, সিম ১৩০, পটল ৬০, সজিনা ডাটা ১২০,পটল ৭০,ধনেপাতা ১২০,চায়না আদা ২৫০, দেশি আদা ১৫০, চায়না রসুন ১৫৫, দেশি রসুন ১২০ পিঁয়াজ ৫০ টাকা এবং লেবু ৪০টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা মোঃ সাগর বলেন, হিসাব অনুযায়ী কাঁচা সবজির দাম তেমন বাড়েনি বললে চলে। কারণ বছরজুড়েই তো সবকিছুর দাম বেশি। সেই বেশি দামেই এখনও বিক্রি হচ্ছে। তবে রমজান উপলক্ষ্যে আলাদাভাবে দুয়েক দিনের মধ্যে দুই একটির দাম বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল কেজি ৭২ টাকা, আটাশ ৬০ টাকা, পোলাও চাল খোলা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, প্যাকেট কেজি ১৫৫টাকা, ভেসন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মোটা দানা মশুর ডাল ১০০ টাকা, দেশি ছোট মশুর ডাল ১৩০টাকা, খেসারির ডাল ৮০ টাকা,মুগ ডাল ১২৫ টাকা,বুটের ডাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাদা চিড়া ৬৫টাকা কেজি, লাল চিড়া কেজি ৭০ টাকা,মুড়ি কেজি ১১০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৮৭ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩৭৪ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটার ১৮০ টাকা এবং সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া লবণ এক কেজির প্যাকেট ৪২টাকা কেজি, সাদা চিনি ১১৩, আটা কেজি ৬৫ টাকা,দুই কেজির প্যাকেট আটা ১৩০টাকা, ময়াদা কেজি ৭৮ টাকা,জিরা ৬২০ টাকা,হলুদের গুরা ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ব্রয়লারের কেজি ২৫০ টাকা, লেয়ার ৩২৫ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৪৫ টাকা, দেশি মুরগি ৭৫০টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা এবং ছাগল ৮৫০ থেকে ৯০০, খাসির মাংস ১১০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রুই ও কাতল মাছ কেজি ৩০০ থেকে ৩২০টাকা, মাজারি ইলিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৭০টাকা, পাপদা ৩০০ থেকে ৫০০টাকা, পাঙ্গাস ২২০ থেকে ২৪০টাকা, ট্যাংরা ৬০০টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, কাঁচকি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রথম রমজান উপলক্ষে বাজার করতে আসা রেজাউল কবির বিপ্লব বলেন, আজ থেকে রমজান শুরু হয়েছে। অফিসের কারণে বিভিন্ন সময়ে বাজার করতে পারি না। আজ শুক্রবার তাই সময় পেয়েছি বলে বাজারে এসেছি। বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে যে টাকা নিয়ে এসেছি ৫ দিনের বাজারও হবে না মনে হচ্ছে। কতদিন আর এভাবে চলবো। সবকিছুর দাম যে হারে বাড়ছে তাতে কিছুদিন পরে না খেয়ে থাকতে হবে। গরিব মানুষের মরা ছাড়া কোনো গতি নেই।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমী রানী মিত্র বলেন, ‘আমাদের বাজার তদারকি অভিযান অব্যহত রয়েছে। রমজানকে কেন্দ্র করে অযথা কেউ মূল্য বৃদ্ধি করবে তা হবে না।ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন হয় এমন কোন ঘটনা ঘটলে প্রমানসহ লিখিত অভিযোগে অবগত করুন বা ১৬১২১ নম্বরে যোগাযোগ করুন। অভিযোগ প্রমানিত হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
তিনি আরো বলেন,‘রমজানে যারা দাম বাড়াবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মানুষের জন্য বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।’
অন্যদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের মধ্যে হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে।তারা বলেন সরকারকে অচিরেই দাম সহনীয় করতে উদ্যোগ নিতে হবে এবং বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে।এই রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর হবে এমনটাই প্রত্যাশা ক্রেতাদের।