প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই লোকসানের বোঝা নিয়ে চলছে রাজশাহী ওয়াসা। একদিকে লোকসান এবং অন্যদিকে আয় বাড়ানো নিয়ে সরকারের চাপে প্রতিষ্ঠানটি বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। প্রেক্ষিতে ফের পানির বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, সরকারের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে পানির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে রাজশাহী ওয়াসা। সর্বশেষ ১৩তম বোর্ড সভায় প্রাথমিক ভাবে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য বোর্ড সভায় বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকীর হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাজশাহী ওয়াসা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি চাহিদার অনুযায়ী পানি উৎপাদন বৃদ্ধি করে মহানগরীতে সুষ্ঠুভাবে পানি সরবরাহ করে আসছে। পানি সরবরাহ করতে গিয়ে বর্তমানে রাজশাহী ওয়াসার পরিচালনা ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। গ্রাহকের কাছে বিল অনুযায়ী আয় প্রায় ১৭ কোটি। কিন্তু গত অর্থবছরে প্রদেয় আয় উঠানো সম্ভব হয় নাই। গত অর্থবছরে সর্বসাকুল্যে আয় হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা।
এছাড়াও রাজশাহী ওয়াসায় বর্তমানে ৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এই সকল প্রকল্প পরিচালনা, রাজশাহী ওয়াসার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয়, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। এতে রাজশাহী ওয়াসার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। যার ফলে পানির মূল্যবৃদ্ধি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
তিনি জানান, রাজশাহী ওয়াসায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন দরে গ্রাহকের কাছে পানি সরবরাহ করছে। সরকারের অনুমোদনক্রমে বর্তমানে রাজশাহী ওয়াসার পানির দর আবাসিক প্রতি হাজার লিটারে ৬.৮১ টাকা, বাণিজ্যিক ১৩.৬২ টাকা। যা গত ২০২২-এর ১ ফেব্রুয়ারি হতে কার্যকর করা হয়েছে। সে কারণে রাজশাহী ওয়াসার বর্তমানে পানির অভিকর বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয় অপেক্ষা অনেক কম।রাজশাহী ওয়াসাকে তার পরিচালনা ব্যয়ের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত অনুদানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। স্থানীয় সরকার ইতোমধ্যে তাদের প্রদত্ত অনুদানের পরিমাণ হ্রাস করেছেন এবং পর্যায়ক্রমে এই অনুদান আরও অধিক হারে হ্রাস করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে তা প্রতিফলিত হয়েছে। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করতে সরকাররের তাগাদা অব্যাহত রয়েছে।
সভায় বর্তমান রাজশাহী ওয়াসার সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা ওয়াসার (প্রতি ১০০০ লিটার) পানি অভিকরের পার্থক্য তুলে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রেও রাজশাহী অনেক পিছিয়ে আছে বলে তিনি জানান। ঢাকা যেখানে আবাসিক ১৫.১৮ টাকা, বাণিজ্যিক ৪২ টাকা, চট্টগ্রাম ওয়াসার আবাসিক ১৮ টাকা, বাণিজ্যিক ৩৭ টাকা, খুলনা ওয়াসার আবাসিক ৮ টাকা ৯৮ পয়সা, আর বাণিজ্যিক ১৪ টাকা। সেখানে রাজশাহী ওয়াসার আবাসিক সর্বশেষ বর্ধিত আবাসিক অভিকর ধরা হয়েছে ৬ টাকা ৮১ পয়সা এবং বাণিজ্যিক অভিকর চালু রয়েছে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা। যা অন্যান্য ওয়াসা এবং বিভিন্ন পৌরসভা থেকেও রাজশাহীবাসীকে অনেক কম অভিকর দিতে হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই বাৎসরিক পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাড়ছে, বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে, জনবল ব্যয়ও বাড়ছে। এ সবই ভুর্তকী দিয়ে চলছে।
এছাড়াও রাজশাহী ওয়াসার আয় ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে এবং নগরবাসীকে পানিরগুণগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে সেবা প্রদান, পানি অভিকরের বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্বপূর্ণ করার লক্ষ্যে পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে ইতোপূর্বে অংশীজনদের নিয়ে সভায় পানির মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিতা তুলে ধরা হয়। বর্তমানে রাজশাহী ওয়াসার ভূ-পরিস্থিত পানি শোধনাগার শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে শতভাগ পানি রাজশাহী মহানগরীতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আগামী ২০২৭ সালের দিকে মহানগরবাসি এই সুবিধা পাবেন। এতে পানির গুণগতমান বৃদ্ধি প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ বিল ও রক্ষাবেক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবি হয়ে পড়বে। এ সমস্যা সমাধানে পানির মূল্য বৃদ্ধির যুক্তিকতা ধরা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্থ ও প্রশাসন এফএম তুহিনুৃল আলম, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আল্লা হাফিজ, রাজশাহী ওয়াসার চীফ ইঞ্জিনিয়র পারভেজ মাহমুদ ও রাজশাহী ওয়াসা সচিব বরমান হোসেন প্রমূখ।