তানজিলা আক্তার রাজশাহী, প্রতিনিধি:রাজশাহীর প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় গ্রিন কোয়ালিশন (সবুজ সংহতি) গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (৩ জুন) দুপুরে মহানগরীর একটি রেস্তোরাঁয়
রাজশাহীর যুবকদের বৃহৎ ঐক্য বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) এর যৌথ আয়োজনে
অনুষ্ঠিত এক নাগরিক ভাবনা ও সবুজ সংহতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ কোয়ালিশন গঠন করা হয়।
এসময় বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনিম জামালের সঞ্চালনায় এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বারসিক এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গবেষক শহিদুল ইসলাম।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ, কৃষিপ্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা বর্তমান পরিবর্তিত সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মানুষের সীমাহীন লোভের কারণে আজ প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টি (প্রাণী, বৃক্ষ, লতাপাতা), পাহাড়, বন, নদ-নদী জলাশয়-জলাধার সবই ভয়াবহ বিপন্নতার পথে। প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল সৃষ্টির সেরা ‘জীব’ বলে দাবিদারদের একটি শক্তিশালী অংশ (অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতায় দাপটে কোনো কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশ) এ বিপন্নতা তৈরির জন্য দায়ী।
বর্তমানে মানুষের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ যা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে জলবায়ু পরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক ধারাকে। এর ফলে প্রকৃতি নির্ভর মৌসুমভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর পড়ছে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব, যা আমাদের দেশের মতো প্রকৃতিনির্ভর গ্রামীণ আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে নানা মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের কৃষকদের পক্ষে ঋতুভিত্তিক ফসল চাষ পঞ্জিকা অনুসরণ করে ফসল চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। বন্যা, খরা, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রতিনিয়ত সামাল দিতে হচ্ছে। খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলও এর বাইরে নয়। এখানে দিনে দিনে তীব্র তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি, খরা এবং সেই সঙ্গে কৃষিতে অধিক রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে বরেন্দ্র বাস্তুসংস্থান বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। শুধু গ্রামে নয়, এর প্রভাব পড়ছে নগরেও এবং নগর পরিবেশ প্রতিবেশও দিনে দিনে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।
বারসিক এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গবেষক শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার দীর্ঘ সময়ে উন্নয়ন কাজ পরিচালনার কারণে নানামুখী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবসময় পরিবেশবান্ধব উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধান (ন্যাচার বেজ সল্যুউশন ও ডেভেলপমেন্ট) ও উন্নয়নের প্রতি তিনি বার বার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে আমরা দেখছি সামান্য কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে উন্নয়নের নামে বৃক্ষ হত্যা, পুকুর ভরাট, প্রাকৃতিক জলাধার বিনষ্ট করছে। যার ফলে নগরের পাখি কমে গেছে, নগরের তাপমাত্রা বেড়েছে। নগর বাস্তুসংস্থানে (ইকোসিস্টেম) বিপর্যয় দেখা গেছে।
হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি নদী ও পরিবেশ গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, এ নগরে পরিবেশবাদী এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে যেসব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের মধ্যে ঐক্য এবং পরিবেশ উন্নয়নে যৌথ সমন্বয় থাকা দরকার। এ লক্ষ্যেই রাজশাহী মহানগরীর প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় একটি সবুজ সংহতি (গ্রিন কোয়ালিশন) প্রয়োজন। যার উদ্দেশ্য হতে পারে- মানুষকে পরিবেশ-প্রতিবেশ বিনাশী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত করা, যাতে প্রকৃতিতে বাসরত সব প্রাণ সুরক্ষিত থাকে।
সভায় প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষা, খাদ্য সার্বভৌমত্ব এবং জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় রাজশাহী মহানগরীতে গ্রিন কোয়ালিশন গঠন এবং এ সম্পর্কি সমন্বিত নাগরিক কার্যক্রম শুরু এখন সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করা হয়। আর তাই নদী ও পরিবেশ গবেষক, লেখক মাহবুব সিদ্দিকীকে আহ্বায়ক এবং পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম রাজুকে সদস্য সচিব করে সবুজ সংহতি (গ্রিন কোয়ালিশন) এর আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষায় উদ্যোগী ব্যক্তি ও সংগঠন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, প্রতিনিধি, সচেতন ব্যক্তি ও সংগঠনকে আঞ্চলিক এবং জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করে ‘সবুজ সংহতি’ বা গ্রিন কোয়ালিশন তৈরি করা হবে বলে জানানো হয়।
রাজশাহীর প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় নাগরিক ভাবনা ও সবুজ সংহতি বিষয়ক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সেভ দ্য ন্যাচার অ্যান্ড লাইফ এর চেয়্যারম্যান মিজানুর রহমান মিজান, ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, সেকেন্দার আলী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুভাস চন্দ্র হেমব্রম, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সাধারণ সম্পাদক ও বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সভাপতি শামীউল আলীম শাওন, গ্রিন ভয়েস রাজশাহীর বিভাগীয় সহ সমন্বয়ক আব্দুর রহিম, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমান বাবু, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তানজিলা আক্তার।