নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর দূর্গাপুরে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে চলছে তিন ফসলি জমিতে পাল্লা দিয়ে অবৈধ পুকুর খনন হিড়িক। প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করায়, ভিকু দালালেরা অনায়াসে কাকড়া গাড়িতে করে মাটি বহন করে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তা ও মহাসড়কগুলো নষ্ট করছেন। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা এলাকার সাধারণ লোকজন, স্কুলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা উক্ত রাস্তার ধুলা-বালির কারণে শ্বাস, প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে গেলে এক্সিডেন্ট সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে।
অপরদিকে, বিদুৎ এর পোল রেহাই পেলনা ভূমি দস্যদের হাত থেকে। তিন ফসলী জমিতে দেদারছে দিনে রাতে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুকুর খনন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও উপজেলা প্রশাসন ভেকু দালালদের কাছে প্রভাবিত হওয়ার কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, বরং নিরব ভূমিকা পালন করছেন। এদিকে ভেকু দালালেরা সন্ধা লাগলেই থানা গেট ও উপজেলা চত্বরে ভীড় জমায়।
সূত্রে জানা গেছে, দূর্গাপুর উপজেলায় প্রশাসনের স্বঘোষিত কেয়ার ট্রেকার রাকিবুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে আবার সময় সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেজে ভেকু দালালদের সাথে সরাসরি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধ পুকুর বৈধ করছেন। আর পুকুর খনন ও রাস্তা নষ্ট করে মাটি বিক্রির লিখিত ও মৌখিক অনুমতি দিচ্ছেন।
আবার অনেক যায়গায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা নিজেও পুকুর খননের ও কাকড়া গাড়িতে করে মাটি বহনের স্বাক্ষরিত অনুমতি দিচ্ছেন।
এদিকে ভেকু দালালেরা উচ্চ পদস্থ্য দুই কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের লেনদেন করে দিনে-রাতে তিন ফসলী জমিতে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে পুকুর খনন করে, কাকড়া গাড়িতে করে মাটি বহন করে গ্রামীণ সড়ক ও মহাসড়ক নষ্ট করছেন।
এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, দূর্গাপুর উপজেলার আলিপুর নান্দিগ্রাম বিলে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে তিন ফসলী জমিতে দুইটি বিদুৎ এর পোল থাকার পরেও চারোদিকে ঘিরে পাড়ি বেঁধে নান্দিগ্রামের আয়নাল স্কেবেটর ( ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন করছেন।
সেখানে প্রভাবশালী ভেকু দালাল বিএনপি নেতা আনোয়ার হত্যা মামলার উল্লেখ যোগ্য আসামি জাহাঙ্গীর @ ছলু জাহাঙ্গীর এর সহায়তায় পুকুর খনন করছে।
প্রায় ২০ বিঘা জমিতে পুকুর খননের ভেকু সরবরাহ করেছেন ভেকু দালাল জাহাঙ্গীর এবং তার পাশেই একই গ্রামের বাবুল, সাকির ও ফিরোজ তিনটি পুকুর খনন করছেন প্রায় ৩০ বিঘা সেখানেও ভেকু দিয়েছেন জাহাঙ্গীর (ছলু)।
এ বিষয়ে ভূমিদস্য ভেকু দালাল জাহাঙ্গীরের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমাকে রাজশাহী এসপি পুকুর খননের লিখিত অনুমতি দিয়েছে, তাই আমি পুকুর খনন কার্যক্রম চালাচ্ছি। কারো সাথে কথা বলার মত আমার সময় নাই।
এছাড়াও দূর্গাপুরের বিতর্কিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আতিকুরের ভাই ভেকু দালাল বাপ্পির হাত থেকে ও রেহাই পায়নি বিদুৎ এর পোল। নান্দিগ্রাম বিলে মোহাম্মদ আব্দুল মোতালেবের তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করছে, প্রায় ৮ বিঘা ও হেলালের ১০ বিঘা। সেখানে ভেকু সরবরাহ করেছেন ভেকু দালাল বাপ্পি।
অপরদিকে দূর্গাপুর উপজেলার তরিপথপুর বীলে তিন ফসলী জমি ও ডিপটিওবয়ের পিলার ও পাইপ নষ্ট করে দূর্গাপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রবের নেতৃত্বে তার ভাই ও ভাতিজা খায়রুল ও ইসলাম তিনটি অবৈধ পুকুর খনন করছেন যাহা প্রায় ৯ ও ১২ বিঘা ও ১৫ বিঘা। সেখানে ভেকু সরবরাহ করেছেন আলোচিত সেই ছলু জাহাঙ্গীর।
জানাযায়, তিনি পূর্ব বাংলা কমানিষ্ট পার্টি (এম এল এস এস) এর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ থাকায় এলাকায় কোন লোকজন এই ভূমি দালালের বিরুদ্ধে মুখ খুলেনা।
পুকুর খনন বিষয়ে দূর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ বলেন, পুকুর খনন কোন ভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। উক্ত পুকুর খনন বন্ধ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়
উপস্থাপন করেন।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা’র সাথে কথা বলে তিনি বলেন, কোথায় কোথায় পুকুর খনন হচ্ছে আমাকে তালিকা দেন আমি দেখছি বলেন। তবে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বিষয়গুলো এড়িয়ে জান।
বিষয়গুলো নিয়ে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দূর্গাপুর জোনাল অফিস কর্মকর্তা (ডিজিএম) এর সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন,আমরা দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবগত করেছি যাতে বিদ্যুতের পোল নষ্ট করে পুকুর খনন না হয়। কিন্তু তিনি কি কারনে কোন পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না, তা বুঝতে পারছি না। আমাদের তো পুলিশ নেই যে আমরা ধরে নিয়ে আসবো এজন্যই তো উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি।
এবিষয়ে দূর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক জানান, পুকুর খনন করলে মাটি কি আকাশ দিয়ে নিয়ে যাবে। কাকড়া গাড়ি দিয়ে নিয়ে গেলে তো রাস্তা নষ্ট হবেই। তিনি আরও বলেন, আমরা পুকুর খননের অনুমতি দেওয়ার বা বন্ধ করার এখতিয়ার রাখিনা। এটা দেখবে উপজেলা প্রশাসন তবে আইন শৃঙ্খলার কোনো অবনতি ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। উপজেলা প্রশাসন ভূমি দালালদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য যদি পুলিশ চাইলে আমরা সর্বক্ষনিক দিতে প্রস্তুত আছি।