আলিফ আরিফা স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের ধুম পড়েছে। তিতাস গ্যাস কোম্পানীর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে এক শ্রেণির ঠিকাদার ও দালালদের সহযোগিতায় অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে ওই অবৈধ গ্যাস। এতে সরকারি মূল্যবান সম্পদ গ্যাস অপচয়সহ সরকার হারাচ্ছেন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। বিভিন্ন মাধ্যম ও সূত্র মতে জানা গেছে যে, সরকার আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার পর থেকে বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সুযোগ বুঝে অপকায়দায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণ করছেন। গাজীপুরে ১০ হাজারের অধিক আবাসিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। গাজীপুর মহানগরের বড়বাড়ি, তারগাছ, টঙ্গীর সাতাইশ গাজীপুরার হিন্দু বাড়ির মোড়, কাশিমপুর, কোনাবাড়ি এলাকাসহ কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক, পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার বেলতলাস্থ সাত্তার গেটসহ বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের বড় বড় সিন্ডিকেটের তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়- বোর্ড বাজারস্থ বড় বাড়িতে জনৈক হুমায়ুন কবির তার দোতলা বিশিষ্ট বাড়িতে চলছে অবৈধ গ্যাস। কিভাবে চালানো হচ্ছে- জানতে চাইলে বাড়ির কেয়ারটেকার সুলতান অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের কথা স্বীকার করে বলেন, কাকে কি দিয়ে গ্যাস চালায় তা মালিক জানেন। আমি জানিনা। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বাড়ির মালিক হুমায়ুন কবির বলেন- জাকির নামের এক ঠিকাদারের মাধ্যমে মাসিক ৩ হাজার টাকা দিয়ে লাইন চালানো হচ্ছে। তার পাশেই রয়েছে ৬তলা বিশিষ্ট বাড়ি।
বাড়ির মালিক রেজা মহানগরের টঙ্গীর সাতাইশ গাজীপুরার হিন্দু বাড়ির মোড়। সেখানে পাশাপাশি তিনটি বহুতল ভবনে চলছে অবৈধ গ্যাসের ব্যবহার। একটি বাড়ির মালিকের নাম সৈকত। সেখানে গেলে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। কথা বলেন তার স্ত্রী। অবৈধ গ্যাস ব্যবহার বিষয়ে তিনি বলেন- দোতলা পর্যন্ত আমাদের গ্যাস লাইন বৈধ। বাকি ৪ তলায় গ্যাস অফিসকে ম্যানেজ করেই লাইন চালানো হচ্ছে। কার মাধ্যমে চালানো হয়, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিতে রাজি হননি। তার স্বামীকে ফোন করলেও ফোনে পাওয়া যায়নি। পাশ^বর্তী বাড়ির মালিক টঙ্গী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল র্লিখক। তাকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে তাদের গ্যাস লাইন বৈধ বলে দাবি করলেও পাশর্^বর্তী লোকজন জানান, তাদের পুরো গ্যাস লাইনই অবৈধ। তারা তাদের এক পুলিশ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে গ্যাস ব্যবহার করেন। তাদের পাশ^বর্তী আরেক বাড়ি ওয়ালা সানাউল্লাহ। তিনি গ্যাস বিলের একটি বই দেখিয়ে বলেন- আমার কোন অবৈধ গ্যাস লাইন বা চুলা নেই।
তবে প্রতিবেশীদের অভিযোগ- ওই ৩ বাড়ির কোন বাড়িতেই বৈধ গ্যাস লাইন নেই। গাজীপুরার কাজী বাড়ি সড়কে রয়েছে আরেকটি ১০তলা বিশিষ্ট আলিসান বাড়ি। ওই বাড়ির নীচ তলায় রয়েছে নামমাত্র কয়েটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। কিন্তু পুরো বাড়িই চলছে তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে। বাড়ির কেয়ারটেকার মান্নান বিষয়টি স্বীকার করলেও মালিক পক্ষের কারো সাথে কথা বলা যায়নি। এছাড়া গাজীপুর মহানগরের বাইরে কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার বেলতলা সাত্তার গেট নামক স্থানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। যেখানে বহুদিন যাবৎ তিতাসের অবৈধ লাইন সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়িগুলোর মধ্যে কুটি মোল্লার বাড়ি অন্যতম। তার সাথে কথা বললে- তিনি তার বাড়ি বাদে আশ-পাশের সকল বাড়িতে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের অভিযোগ করেন। মাঝেমধ্যে তিতাস কতৃপক্ষ লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করে কিছু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও কদিন পরেই সেগুলো আবারো সচল হয়।
এসব অবৈধ লাইন সম্পর্কে তিতাস ডিএমডি সাইদুল হাসান জেনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। গাজীপুরের বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারি গ্রাহকরা মনে করেন- অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারিদের কারণে তারা চাহিদা মতো গ্যাস পাচ্ছেন না। প্রায় সময়ই চাপ না থাকায় রান্নার কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে এলপি গ্যাস। এজন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। পক্ষান্তরে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের নিকট থেকে অবৈধ টাকা পয়সা নিয়ে তিতাসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও কমচারীসহ ঠিকাদার ও দালালরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। যে কারণে সরকারি সম্পদ গ্যাস শুধু অপচয়ই হচ্ছে না, সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিতাসের গাজীপুর আঞ্চলিক বিপনন বিভাগ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) প্রকৌশলী কাজী সাইদুল হাসান অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকতে পারেন স্বীকার করে বলেন- আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর অবৈধ গ্যস সংযোগ বন্ধে আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।