নিউজ ডেস্ক: চাঁদাবাজ, ঘুষ, মামলা বাণিজ্যকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি এবং বাংলাদেশে ইনসাফ ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজশাহীর ঐতিহাসিক (হাজী মুহাম্মদ মুহসীন)মাদ্রাসা ময়দানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী জেলা ও মহানগরের কর্মী সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে আমীর ডা: শফিকুর রহমান আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবে আহত এবং শহীদের রক্ত দিয়ে কেনা এই স্বাধীনতা বৃথা যেতে দিবো না। দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা রক্ত দিলেন আজীবন আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, বাচ্চারা এখনও স্লোগান দিচ্ছে, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’। ন্যায়বিচার, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা বিষয়ে জামায়াদের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে জামায়াতে আমীর বলেন, কথা দিচ্ছি সবার সহযোগিতা ও ভালোবাসা নিয়ে সুযোগ পেলে আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়ে তুলার চেষ্টা করবো। আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে ঘরে ও বাইরে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সাকিব আনজুমের বাবা সাইদুল হক। মঞ্চে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে বিদায় করতে গিয়ে আমার কলিজার টুকরা সাকিব শহীদ হয়েছে। আমি একজন গর্বিত পিতা। আমার সাকিবের মতো হাজারো ছাত্র-জনতা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই ব্যর্থ হওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. মো. কেরামত আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির রাজশাহীর সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন। ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক।
রাজশাহী মহানগরীর সেক্রেটারি ইমাজউদ্দিন মন্ডল এবং জেলা সেক্রেটারি গোলাম মুর্তজার সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ও মোবারক হোসাইন, সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, পাবনা জেলা আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমির মাওলানা আবুযর গিফারী, নাটোর জেলা আমির ড. মীর নুরুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা আমির খন্দকার মো. আব্দুর রাকিব, রাজশাহী জেলার নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল খালেক, মহানগরীর নায়েবে আমির এডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম, যুব বিভাগের সেক্রেটারি সালাহউদ্দিন আহমেদ, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি আশরাফুল আলম ইমন, জেলার মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মাওলানা ইসমাইল আলম আল হাসানী, মহানগরীর উলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা রুহুল আমিন, খেলাফতে মজলিশের রাজশাহী মহানগরীর সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ আবুল বাশার, হেফাজতে ইসলামের আহবায়ক মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী, ছাত্রশিবিরের জেলা পশ্চিম শাখার সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, জেলা পূর্বের সভাপতি রুবেল আলী, মহানগরীর সাংগঠনিক সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার, জেলার শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক কামরুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নাজমুল হক, মহানগরীর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সামাদ, জামায়াতের রাজশাহী মহানগরীর সহকরী সেক্রটারি অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নওসাজ জামান, মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. শামিম উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ।
শনিবার ভোর থেকেই রাজশাহী জেলার পবা, মোহনপুর, তানোর, গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট ও বাগমারা উপজেলা থেকে কর্মী সম্মেলনে দলটির নেতাকর্মীরা যোগ দেন। এছাড়া মহানগরী ১২ থানা এবং ৩০টি ওয়ার্ড থেকে ব্যানার, ফেস্টুন ও দলীয় প্রতিক দাঁড়িপাল্লা হাতে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে সম্মেলনে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানকে স্বাগত জানিয়ে দিচ্ছেন নানা স্লোগান। নগরীর সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৫ বছর পর রাজশাহীতে প্রকাশ্যে জামায়াতের এমন কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো, যা দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। রাজশাহী মহানগর এবং জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নেতা-কর্মীরা ভোর থেকেই দলে দলে মাদ্রাসা মাঠে উপস্থিত হতে থাকেন। এসময় নেতাকর্মীদের মাঝে ছিল আনন্দের আমেজ। জামায়াতের কর্মীদের “আল্লাহু আকবার” ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজশাহী নগরীর পথ-প্রান্তর এবং ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান। রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠ থেকে শুরু করে সাহেব বাজার বর্ণালী মোড়, লক্ষীপুর পার হয়ে সমাবেশ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া নগরীর যানযট এড়াতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যানবাহন সমূহ তেরখাদিয়া মহিলা স্টেডিয়াম, ভদ্রা এবং কাশিয়াডাঙ্গা ও তালাইমারি এলাকায় পার্কিং করে রাখা হয়।
কর্মী সম্মেলন কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে সম্মেলন শুরু করে এবং ইসলামী সংগীত ও হামদ পেশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প সাংস্কৃতিক সংসদ এবং প্রত্যয় শিল্পীগোষ্ঠী।