নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান পাঁচ বছরে অনেক সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ডা. মনসুর ২০১৮ সালে প্রথমবার এমপি হন। এবার মনোনয়ন পাননি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। হলফনামায় দেখা গেছে, পাঁচ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৭ গুণ। ব্যাংকে গড়ে উঠেছে টাকার পাহাড়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মনসুর রহমান শিক্ষকতা, শেয়ার ও চাকরি থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১৪ লাখ ৯ হাজার ৯৬১ টাকা। এবারের হলফনামায় তিনি তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৯ টাকা।
এখন কৃষিখাত থেকেই তার আয় ২৭ লাখ, ভাড়া আদায় ৮৪ হাজার, ব্যবসা থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬৩৪ টাকা, চাকরি থেকে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৩ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে বছরে আসে ৩৮ লাখ টাকা। এই ৩৮ লাখ টাকার খাত নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, মনসুরের হাতে এখন নগদ আছে ১ লাখ ৯ হাজার ১৬২ টাকা। ২০১৮ সালে ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৪ টাকা। ব্যাংকে ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ১২৪ টাকা। এখন ব্যাংকে আছে ২ কোটি ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৬ টাকা। আগে সঞ্চয়পত্র ছিল ৩৫ লাখ টাকার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭৬৭ টাকা।
মনসুরের আগে ঋণ ছিল ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৬১ টাকা। ঋণের পরিমাণ এখন কমে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ১৮ টাকায় নেমে এসেছে। এই পাঁচ বছরে ঋণের টাকা প্রায় ১২ লাখ শোধ করেছেন।
আগে স্থাবর সম্পদ হিসেবে মনসুরের ৩০ লাখ টাকার জমি ছিল। এবার তার নামে সাড়ে ৩২ বিঘা কৃষিজমি ও ৬ বিঘা পুকুর দেখানো হয়েছে। এই জমি ও পুকুরের মূল্য দেখানো হয়নি।
আয় ও সম্পদ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে এমপি মনসুর রহমানকে ফোন করা হয়। তবে তিনি ধরেননি। এই আসনে এবার প্রার্থী আছেন আরও পাঁচজন। তারা হলেন-এ আসনের দুইবারের সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা (আওয়ামী লীগ মনোনীত), মখলেসুর রহমান (গণফ্রন্ট), শফিকুল ইসলাম (জাকের পার্টি), আবুল হোসেন (জাতীয় পার্টি) ও শরিফুল ইসলাম (বিএনএম)।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দারার নামে কোনো মামলা নেই। তিনি কৃষিখাত থেকে বছরে ৬ লাখ ১০ হাজার, শেয়ার থেকে ৩ লাখ স৩৪ হাজার ২২৯ টাকা ও একটি কোম্পানীর পরিচালক হিসেবে বছরে ২১ লাখ টাকা আয় করেন। তার হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ২ কোটি ২১ লাখ ২৩ হাজার ১৩৭। ব্যাংকে আছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ টাকা। শেয়ার আছে ৪ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার। সঞ্চয়পত্র আছে ৩৬ লাখ টাকার। ৮১ লাখ ও সাড়ে ২৭ লাখ টাকা দামের দুটি জিপ আছে।
স্ত্রীর নামেও আছে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা দামের একটি জিপ। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র আছে ২ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ১০২ টাকার। শেয়ার আছে আরও ২ কোটি ২০ লাখ টাকার।
ব্যাংকে আছে ৩১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। নগদ আছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৯ টাকা। প্রার্থীর নির্ভরশীলদের নামে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। দারার নামে ৩০৩ ও স্ত্রীর নামে ৩১১ শতাংশ কৃষিজমি আছে। দারা ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ আসনের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি আবার ভোটের মাঠে নেমেছেন।
এ আসনের গণফ্রন্টের প্রার্থী মখলেসুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ। তার নামেও কোনো মামলা নেই। তিনি ব্যবসা থেকে বছরে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। তার ওপর নির্ভরশীলদের বছরে আয় সাড়ে ১২ লাখ টাকা। মখলেসুরের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ দেড় লাখ। তিনি ১৪ বিঘা জমির মালিক। ১০ লাখ টাকা দামের একটি বাড়ি আছে তার। স্ত্রীর নামে আছে ৩ লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। বাসায় আছে ৪ লাখ টাকার আসবাবপত্র।
জাকের পার্টির শফিকুল ইসলামের পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তার নামে কোনো মামলা নেই। তিনি কৃষিখাত থেকে বছরে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় করেন। তার হাতে কেবল ১ লাখ টাকা আছে, ব্যাংকে কিছু নেই। নিজের নামে আছে এক একর কৃষিজমি। স্ত্রীর আছে ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। এছাড়া তাদের আর কোনো সম্পদ নেই।
জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন পড়াশোনা করেছেন এমএসসি পর্যন্ত। তার নামেও কোনো মামলা নেই। কৃষিখাত থেকে তিনি ১ লাখ ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে পান ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অনুদান পান বছরে ১ লাখ টাকা। এখন তার হাতে আছে ৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর হাতে আছে ২ লাখ। ব্যাংকে কোনো টাকা নেই। আবুল হোসেনের প্রায় ৫ একর কৃষিজমি আছে। ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ। আবুল হোসেন একসময় এই আসনটির সংসদ সদস্য ছিলেন।
বিএনএমের প্রার্থী শরিফুল ইসলাম এমএসএস পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি কোনো মামলার আসামি নন। তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৯৮ টাকা। নগদ টাকা আছে প্রায় ৭ লাখ। ব্যাংকে কোনো টাকা নেই। শরিফুল ইসলামের স্ত্রীর নামেও কোনো সম্পদ নেই।