নিজস্ব প্রতিবেদক:অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে ঘটেছে রাজশাহীতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। টানাপোড়েনের দোটানায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। হুজুগে কান দিয়ে কেউ যানবাহন পাচ্ছেন আবার কেউ পাচ্ছেন না। হয়রানি হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। প্রথম দিনের বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি শ্রমজীবীদের জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে কোথাও বড় ধরনের কোনো নাশকতা বা সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শুরুর পর প্রথমদিনেই মহানগরীর গ্রেটাররোড এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। তবে খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গেলে তারা সড়ক ছেড়ে আশপাশের গলিপথ দিয়ে সটকে পড়ে।
এরপর মহানগরীর বিনোদপুরে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে গাছ ফেলে ছাত্রদলকর্মীরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ গিয়ে ধাওয়া করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর সিটি হাট সড়কে ব্যানার নিয়ে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। তারা সড়ক অবরোধ করতে টায়ার জ্বালিয়ে দেয়। তবে পুলিশ পৌঁছার আগেই তারা গা ঢাকা দেয়। এছাড়া মতিহারের কাপাশিয়া সড়কে পিকেটারদের ধাওয়ার মুখে পড়ে একটি ট্রাক সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। তবে ওই ট্রাকের গতি কম থাকায় এই ঘটনায় সেখানে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে পুঠিয়ায় ট্রাকে আগুন দেওয়ার অভিযোগে আব্দুল কাদের (২০) নামের শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এদিন ৯টার দিকে পুঠিয়া উপজেলার তারাপুর থেকে আটক করা হয় তাকে। তিনি পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর এলাকার লতিফুল ইসলামের ছেলে। এর আগে অবরোধের সমর্থনে হেলমেট পরে কিছু যুবক পুঠিয়ার বেলপুকুর ও ভড়ুয়াপাড়া এলাকায় দুটি ট্রাক ভাঙচুর করে।
এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অ্যাকাডেমিক ভবনের ফটকে তালা দেয় ছাত্রদল। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী গিয়ে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবন ও কৃষি অনুষদ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সেই ফটক খুলে দেয় প্রশাসন।
এদিকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে বড় ধরনের কোনো প্রভাব নেই বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরুর পর থেকেই মাঠে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও যুবলীগসহ তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো জানান, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের কারণে যাত্রী কম থাকায় মহানগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে আজ সকাল থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য রুটের দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাটসহ আন্তঃজেলা রুটের কিছু কিছু বাস চলাচল করছে।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবদুল করিম জানান, মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, সাগড়দাঁড়ি এক্সপ্রেস ও তিতুমীর এক্সপ্রেসসহ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলো যথাসময়ে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এছাড়া লোকাল ও মেইল ট্রেনগুলোও যথা সময়ে বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে।
এছাড়া নাশকতা রোধে বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার, জিরোপয়েন্ট, মণিচত্বর, সোনাদীঘির মোড়, আলুপট্টি, কুমারপাড়া, লক্ষ্মীপুর, গৌরহাঙ্গা রেলগেট, বিনোদপুর, তালাইমারী, ভদ্রা, কেন্দ্রীয় ও শিরোইলে থাকা ঢাকা বাসস্ট্যান্ড, কোর্ট রেলওয়ে স্টেশন, নগরভবন, রেলভবন, শালবাগান, শাহ মখদুম থানার মোড়, নওদাপাড়াসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে ভোর থেকেই পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে অব্যাহত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত টহল।
মঙ্গলবার ভোর থেকেই রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী, ভদ্রার মোড়, বিনোদপুর মোড়, কামারুজ্জামান চত্বর, শালবাগান, নওদাপাড়া, লক্ষ্মীপুর মোড়, কোর্ট স্টেশন, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, সাগরপাড়া বটতলার মোড়- এই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো নাশকতা ও সহিংসতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জামিরুল ইসলাম গনমাধ্যমে জানান, রাজশাহীতে অবরোধকে কেন্দ্র করে এখনও কোনো সহিংসতা বা নাশতার খবর পাওয়া যায়নি। কেউ এই ধরনের অপচেষ্টা করলে তাকে কঠোর হাতে দমন করা হবে। রাজশাহীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন অপরাধে ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে সর্বাত্মক সতর্ক থাকছেন বলে জানান।